সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : বাঁকখালী নদীর তীর দখল ও উচ্ছেদ নিয়ে চলছে চোর-পুলিশ খেলা। ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে’ কিছু অংশ উচ্ছেদ হওয়ার এক মাসের মধ্যে যেখানে নতুন করে দখল করে প্রকাশ্যে স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলছে। একই সঙ্গে উচ্ছেদ না হওয়ায় অবৈধ দখল করা জমিতে পুরোদমে চলছে নির্মাণ কাজ। যদিও প্রশাসন বলছে উচ্ছেদ করা জমি দখল করলে আবারও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। আর নদীর সীমানা নির্ধারণ হওয়ার পর অন্যান্য অবৈধ স্থাপনাও দখলমুক্ত করা হবে।
গত ২৮ ফেব্রæয়ারি ও ১ মার্চ পর্যন্ত ২ দিন কক্সবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্রের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী কস্তুরাঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় প্রশাসন। যেখানে ৩ শত একর জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৪ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গুটিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় প্রশাসন জানিয়েছিল এক যুগ আগে সরকার ঘোষিত নদী বন্দর বাস্তবায়নের জন্য উচ্চ আদালতের নিদের্শ এ উচ্ছেদ অভিযান এবং সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখা হবে বলে। কিন্তু কার্যত এক মাসে আর কোন উচ্ছেদ অভিযান হয়নি।
রোববার (২ এপ্রিল) কস্তুরাঘাট এলাকা গিয়ে দেখা যায়, উচ্ছেদ হওয়া জমিতে নতুন করে দখল প্রক্রিয়া শুরু করেছে দখলবাজ চক্র। ইতিমধ্যে যেখানে ১০ টির বেশি ঘর তৈরি হয়েছে। প্রকাশ্যে চলছে এই দখল প্রক্রিয়া।
যেখানে কর্মরত বেশিভাগ শ্রমিক কার পক্ষে এসব ঘর তৈরি করছে বলতে রাজী নন। আমান উল্লাহ নামের এক শ্রমিক জানান, তাদের মাঝিই (শ্রমিকদের নেতা) জানবেন কার ঘর তৈরি করতে তাকে নিয়োগ নিয়েছেন। তবে মাঝি তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
হোসেন আহমদ নামের এক যুবক জানান, যে ঘরটি তৈরি হয়েছে ওই জমির সকল কাগজ পত্র তার হাতে রয়েছে। তিনি জানতে পেরেছেন যে মামলার কারণে এ উচ্ছেদ অভিযান হয়ে ছিল তা খারিজ হয়ে গেছে। তাই নিজের জমিতে নিজেই ঘর করছেন।
মনির আহমদ নামের এক বৃদ্ধ জানান, তিনি শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার বাবুলের জমির পাহারাদার। ঘর করে জমি পাহারা দিচ্ছেন। তবে বাবুলের ফোন নম্বর তার কাছে নেই।
রহমত উল্লাহ, রফিকুল ইসলাম সহ আরও কয়েকজন শ্রমিক তার জমিতে ঘর করছেন তার নাম জানেন না বলে দাবি করেছেন। তারা বলেছেন, ঘর করতে তাদের শ্রমিক হিসেবে নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাবিøউটিএ) দেয়া তথ্য মতে, বাঁকখালী নদী দখলদার হিসেবে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী, ১৩১টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৮ ফেব্রæয়ারি ও ১ মার্চ যে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় তা মাত্র ২ জনের দখলে ছিল। যারা বিভিন্ন জনকে বিক্রি করে ছিল। ফলে উচ্ছেদ না হওয়া জমিতে পুরোদমে স্থাপনা নির্মাণ চলছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ পরিচালক নয়ন শীল জানিয়েছেন, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রæয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডবিøউটিএ-কে বাঁকখালী নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। প্রজ্ঞাপনে নদীর তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডবিøউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিলো। পরে ওই সময়ের জেলা প্রশাসনের আপত্তির কারণে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর ভূমি পুনঃ যৌথ জরিপ করা হয়। জরিপে নির্ধারিত জমি হাইকোর্ট এক রীটের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে রায় ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে নদী তীরের ভূমি বিআইডবিøউটিএ-কে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
বিআইডবিøউটিএর উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) নয়ন শীল জানিয়েছেন, নদী বন্দরের জমি বুঝিয়ে দিতে বারবার জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। নদী বন্দর প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় এতো দখল হয়েছে।
উচ্ছেদের ১ মাসের মধ্যে আবারও দখল শুরু হওয়াকে প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপ) এর কক্সবাজার জেলা সাংগঠণিক সম্পাদক এইচএম নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিছু অংশ উচ্ছেদ করার পর ব্যাপক অংশ উচ্ছেদে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আবারও দখল করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের রায়ে ১৮ কিলোমিটার নদীর তীর দখল উচ্ছেদ করতে বলা হয়েছে। প্রশাসনকে দ্রæত রায় কার্যকর করার অনুরোধ জানান তিনি।
রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, উচ্ছেদ হওয়া জমিতে আবারও দখলের খবর নানাভাবে শুনা যাচ্ছে। এটা কোনভাবে মেনে নেয়া হবে না। আবারও উচ্ছেদ অভিযান চলছে।
আদালতের রায় মতে নদীকে জীবন্ত সত্তা মন্তব্য করে তিনি বলেন, নদীর সীমানা নির্ধারণে প্রশাসন কাজ করছে। এটা হয়ে গেলে পুরো নদীর তীর দখল মুক্ত করা হবে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply